ঢাকা , বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
৮ ফেব্রুয়ারি ছয় সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ-আসিফ নজরুল এক সপ্তাহ পর ক্লাসে ফিরলেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটায় উত্তাল জাবি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা সমর্থন করছি নাÑ মান্না চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ৪৬ নেতাকর্মী গ্রেফতার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত আজ শুক্রবার সকালেও মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা থানা স্থানান্তরের দাবিতে সড়ক অবরোধ, যানজট তিতাসের অভিযানে ৮শ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন আড়ালে সবাই আওয়ামী লীগকে কাছে চায় : নুর শেরপুরে গরু চোর সন্দেহে দু’জনকে পিটিয়ে হত্যা লক্ষ্মীপুর ও রাঙামাটিতে ২ লাশ উদ্ধার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জমি নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২ গণতান্ত্রিক সরকার নেই বলেই বিনিয়োগ হচ্ছে নাÑ রিজভী ঢাকায় চলবে গোলাপি বাস, চড়তে লাগবে টিকেট ফেনীতে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩ যুবক নিহত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন ১৯ জনের মৃত্যু মহালছড়িতে ভাইয়ের বিরুদ্ধে সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগ শ্রীপুরে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে থানার এএসআই ক্লোজড সাঘাটার ভূমিদস্যু সুইট ও সহযোগীদের শাস্তির দাবি
আন্দোলনকে কেন্দ্র করে স্থবির দেশের অর্থনীতি * অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি * জুলাই মাসে রাজস্ব আদায় কম ৪০-৬০ শতাংশ * স্থবিরতায় দিনে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা

চ্যালেঞ্জের মুখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

  • আপলোড সময় : ০৩-০৮-২০২৪ ০১:২১:০৬ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৩-০৮-২০২৪ ০১:২১:০৬ পূর্বাহ্ন
চ্যালেঞ্জের মুখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
জাহাঙ্গীর খান বাবু
২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে দেশের অর্থনীতিতেব্যবসা-বাণিজ্যের শ্লথগতির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে দেশের রাজস্ব আহরণেযার প্রমাণ সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতিসরাসরি প্রভাব রাজস্ব আহরণে পড়বে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরাখাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে প্রায় স্থবির ছিল পুরো দেশকারফিউ জারির পর থেকে কল-কারখানা চালু হয়েছেঘুরতে শুরু করেছে অর্থনীতির চাকাতবে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোদমে চালু না হলে রাজস্ব আহরণ বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেএতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে ভ্যাট আহরণেএরইমধ্যে রাজস্ব আহরণের গতি শ্লথ হয়ে গেছেদোকানপাটে বেচাকেনা কমে যাওয়া, কল-কারখানা পুরোপুরি সচল না হওয়ার প্রভাব পড়বে ভ্যাটেআর ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় কমেছে শুল্ক আদায়ওযার কারণে বড় ধরনের ঘাটতি নিয়ে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরেও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)দেশের চলমান পরিস্থিতিতে টানা দশ দিন বন্ধ ছিল মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবাপ্রায় পাঁচ দিন পর সীমিত আকারে চালু হয় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটএই পাঁচ দিনে আমদানি-রফতানি থেকে শুরু করে রাজস্ব সংক্রান্ত সব কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়ইন্টারনেটের কারণে এই সময়ে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ই-কমার্স ব্যবসাওব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ও আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্থবির হওয়ায় রাজস্ব আহরণও স্থবির হয়ে যায়অর্থনীতির চাকা না ঘুরলে রাজস্ব আসবে কীভাবেআগে অর্থনীতির চাকা সচল করতে হবেএরইমধ্যে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে যারা ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ব্যবসা করতেন, তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেনএছাড়া অর্থনীতি স্থবির থাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ছিলএসব খাতে রাজস্ব আহরণে বিরূপ প্রভাব পড়বেঅর্থনীতি সচল থাকাকালীনও এনবিআর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়, সেখানে এ পরিস্থিতিতে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেএনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকাপরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকাএই লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেআন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত হিসেবে রাজস্ব আয় বাড়ানোর চাপ রয়েছেযার কারণে ২০২৪-২৫ নতুন অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকাঅর্থনীতির এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব আহরণ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জর মুখে পড়বে বলেও জানিয়েছেন খোদ এনবিআর কর্মকর্তারাইঅর্থনীতি যতটা সচল থাকবে, রাজস্ব আদায় ততোটা বাড়বেআর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা এলে রাজস্ব আহরণ কমে যাবে, এটা খুবই স্বাভাবিকএসব ক্ষেত্রে ভ্যাটের প্রভাব বেশিতবে সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে আগামী মাসের ভ্যাট আদায়েএছাড়া শুল্ক খাতেও বিরূপ প্রভাব পড়বেকারণ সিংহভাগ শুল্ক আসে আমদানি খাত থেকেআমদানি কমলে শুল্ক আদায় কমবেআর সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো হলে রাজস্ব আহরণে গতি ফিরবে বলে আশা করা যায়
সদ্য সমাপ্ত অর্থবছর শেষে চূড়ান্ত হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৭ হাজার ৪৩৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)যদিও বকেয়া রাজস্ব আহরণসহ বিভিন্ন উদ্যোগে লক্ষ্যমাত্রার ৯৩.৩১ শতাংশ আদায় হয়েছিলতারপরও বড় ঘাটতি এড়াতে পারিনি প্রতিষ্ঠানটিএই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করাটা এখন তাদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জতার ওপর দুশ্চিন্তার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে বড় ধরনের অস্থিরতাবেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, জুলাই মাসের শেষের এক সপ্তাহে অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে ৮৪ হাজার কোটি টাকার বেশিচলমান স্থবিরতায় দিনে অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকাঅর্থনীতির ক্ষতি হয়ত টাকার অঙ্কে মাপা যায়, কিন্তু দেশের ভাবমূর্তির যে ক্ষতি হয়েছে, তা মাপার কোনো বাটখারা নেই
অন্যদিকে ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) মনে করছে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের কমপ্লিট শাটডাউনকর্মসূচির ফলে দেশের অর্থনীতিতে ১০ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছেআর ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার কারণে ১০ দিনে ই-কমার্স খাতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছেএত এত লোকসানের মধ্যে দেশের রাজস্ব আহরণ কীভাবে আসবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন বলে মনে করছেন এনবিআরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা
এনবিআর আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, দেশই যেখানে স্থবির ও অস্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে, সেখানে রাজস্ব আদায়ের সুযোগ কোথায়অর্থনীতির চাকা চলমান না থাকলে অর্থনীতির চলকগুলো কাজ করবে না, এটাই স্বাভাবিকআর দেশ স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক অবস্থায় না ফিরলে যেকোনো কৌশল কিংবা এনফোর্সমেন্ট উদ্যোগ কাজে আসবে নাএই মুহূর্তেও যদি সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যায়, নেতিবাচক প্রভাব থাকবে আরও বেশ কয়েক মাসশুধু জুলাই মাসেই প্রত্যাশার তুলনায় রাজস্ব আদায় কমবে অন্তত ৪০-৬০ শতাংশবর্তমানে ধৈর্য ধারণ করা ও সীমিত পরিসরে যতটুকু কাজ করা যায়, আপাতত করণীয় এটাইএনবিআর সূত্র জানিয়েছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছেযা জিডিপির ৯.৭ শতাংশএরমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকাআর অন্যান্য উৎস হতে ৬১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছেএনবিআরের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আয়কর, মুনাফা ও মূলধনের ওপর কর থেকে আসবে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, ভ্যাট থেকে ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৮৩ কোটি, সম্পূরক শুল্ক ৬৪ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা, ৪৯ হাজার ৪৬৪ কোটি, রফতানি শুল্ক ৭০ কোটি, ৫ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা ও অন্যান্য কর থেকে আসবে ১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকাচলমান অস্থির পরিবেশে এনবিআরের কী করণীয় থাকতে পারে জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, পুরো অর্থনীতি এমনিতেই নেতিবাচক ছিল, আরও নেতিবাচক হয়ে গেলএর পেছনে দুর্নীতিবাজ চক্রেরও হাত থাকতে পারেতবে কাউকে দোষ দেয়া বা দায়ী করার চেয়েও বড় কথা হলো সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশেরএই মুহূর্তে এনবিআরের তেমন কিছু করার নেইতিনি বলেন, যেটা করতে পারে সেটা হলো যেসব কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া রয়েছে সেটা আদায়ের প্রচেষ্টা বাড়ানোঅন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছে, তাদের বিষয়ে মনিটরিং করতে পারেএনবিআর চাইলে তারা ব্যাংক ও ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জানতে চাইতে পারে টাকাগুলো কোথায় কোথায় বিনিয়োগ হয়েছেওই ফাইলগুলো ভালো করে দেখা উচিতএটা দেখার আইনি দায়িত্ব তাদের রয়েছেদুদকেরও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান কার্যক্রম ভালো করে চালিয়ে যাওয়া উচিত
করোনা মহামারির সময়ে সরকারি সাহায্য হিসেবে ৩০ হাজার কোটি টাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছায়নি উল্লেখ করে আবদুল মজিদ বলেন, দেশের যেকোনো দুর্যোগের সময়ে সরকারি সহায়তা সুবিধা বড় বড় ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিয়েছে২০১৩ সালের রাজনৈতিক সংকটের সময়ও একই চিত্র দেখা গেছেএবারও হয়ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতির কথা বিবেচনায় সরকারি সহায়তা আসবেআমার কথা হলো ক্ষতি কিংবা সহায়তা স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকিন্তু ঋণ নেয়ার নামে যারা আত্মসাৎ করেছে, তাদের বিষয়ে কি করা হয়েছে? ওই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী কি টাকা ফেরত দিয়েছে? এ বিষয়ে অন্তত এনবিআর চিঠি দিয়ে জানতে চাইতে পারে টাকাগুলো কোথায় গেল? আমার মতে ঋণ খেলাপিদের ধরে সুশাসনের আওতায় আনা প্রয়োজনসুশাসনের বিকল্প নেই
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য